সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরন লেভেল জোরদার করতে ৮টি সেরা সাপ্লিমেন্ট

পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন মাত্রা এখন আগের তুলনায় কম, যা আংশিকভাবে আধুনিক অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল দ্বারা প্রভাবিত। টেস্টোস্টেরন বুস্টার প্রাকৃতিক সম্পূরক (natural supplements) যা আপনার টেস্টোস্টেরন মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এগুলো সরাসরি টেস্টোস্টেরন বা সম্পর্কিত হরমোন বৃদ্ধির পাশাপাশি কোন কোন ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনকে ইস্ট্রোজেন হরমোনে রূপান্তরিত হওয়াকে প্রতিরোধ করার মাধ্যমে সহায়তা করে। এই বুস্টারগুলোর বেশিরভাগই মানুষের উপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত। এখানে এ ধরনের ৮টি বুস্টার (টেস্টোস্টেরন জোরদারকারক সম্পূরক) নিয়ে আলোচনা করা হল।

১. ডি- অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড (D-Aspartic Acid)
ডি-Aspartic অ্যাসিড একটি প্রাকৃতিক অ্যামিনো অ্যাসিড যা কম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে পারে। গবেষণা বলছে, প্রাথমিক ভাবে এটা গ্রন্থিকোষ উদ্দীপক হরমোন (follicle-stimulating hormone) এবং গ্রোথ হরমোন (luteinizing hormone) বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাজ করে। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ লিউটিনাইজিং (luteinizing) হরমোন অন্ডকোষে লিডিগ (Leydig cells) সেল তৈরি করে, যা অধিক টেস্টোস্টেরন তৈরিতে সাহায্য করে।

প্রাণি ও মানুষের মধ্যে প্রাথমিক গবেষণা দেখা যায় D-aspartic অ্যাসিড ১২ দিনেরও কম সমযের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের পাশাপাশি luteinizing বৃদ্ধি করে এবং তা সারা শরীরে পরিবহণ করে। এটি বীর্যের গুণাগুণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।তিন মাসের একটি গবেষণায় পর্যাপ্ত বীর্য উৎপাদনে অক্ষম পুরুষদেরকে ডি অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড দিয়ে দেখা গেছে, তাদের বীর্য উৎপাদনের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেছে; প্রতি মিলিতে ৮ দশমিক ২ মিলিয়ন শুক্রাণুর জায়গায় ১৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন শুক্রাণু হয়েছে।

অন্য একটি গবেষণা চালানো হয় একদল অ্যাথলেটদের উপর, যাদের পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরন লেভেল রয়েছে। তাদেরকে দুটি গ্রুপে ভাগ করে ২৮ দিনের একটি ভারোত্তলন কর্মসূচি দেয়া হয়। এক গ্রুপকে প্রতিদিন ৩ গ্রাম করে ডি- অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড দেয়া হয়। ২৮ দিন পর দেখা যায়, উভয় গ্রুপেরই শক্তি ও পেশির ভাল উন্নতি হয়েছে; কিন্তু যে গ্রুপকে ডি- অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড দেয়া হয়েছিল, তাদের টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য সূচিত হয়নি।

এই দুই গ্রুপের উপর পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেল, ডি- অ্যাসপার্টিক এসিড মূলত তাদের জন্যই বেশি উপকারী, যাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম কিংবা যাদের যৌন কর্মে অক্ষমতা রয়েছে। যাদের টেস্টোস্টেরন লেভেল স্বাভাবিক রযেছে তাদের জন্য এই সাপ্লিমেন্টটির কোন প্রয়োজন নেই।

সারাংশ: যাদের টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি রয়েছে তাদের জন্য ডি- অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড উপকারী। ডোজের মাত্রা- ২/৩ গ্রাম।

২. ভিটামিন ডি Vitamin D
ভিটামিন ডি একটি চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন, যা সূর্যালোকে চামড়ার মধ্যে উত্পাদিত হয়। এর সক্রিয় রূপ শরীরে স্টেরয়েড হরমোন হিসেবে কাজ করে। আজকাল বিরাট সংখ্যক মানুষ তাদের গায়ে খুব সামান্য রোদ মেখে থাকে।এর ফলে তারা ভিটামিন ডি’র স্বল্পতা বা ঘাটতিতে ভুগছে। ভিটামিন ডি’র সঞ্চয় বৃদ্ধি আপনার টেস্টোস্টেরন লেভেল জোরদার এবং অন্যান সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার, যেমন সুক্রানুর মানোন্নয়ন ঘটায়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ভিটামিন ডি’র ঘাটতির সাথে লো টেস্টোস্টেরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীরা যখন গ্রীষ্মের রোদে বেশি সময় কাটান তখন তাদের টেস্টোস্টেরনের লেভেলও বৃদ্ধি পায়।

এক বৎসর মেয়াদী একটি স্টাডির জন্য ৬৫ জন লোককে বেছে নেয়া হয়, যাদেরকে দুটি দলে বিভক্ত করে এক দলকে প্রত্যেকদিন 3,300 IU মাত্রায় ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খেতে দেয়া হয়। মেয়াদ শেষে দেখা যায়, যে গ্রুপ ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে তাদের টেস্টোস্টেরন লেভেল প্রায় ২০% হারে বৃদ্ধি পেয়ে 10.7 nmol/l থেকে 13.4 nmol/l-এ উন্নীত হয়।

বেশি করে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হলে বেশি করে গায়ে রোদ লাগান। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় 3,000 IU মাত্রায় ভিটামিন D3 সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ এবং বেশি করে ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন।

সারাংশ: ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন যা টেস্টোস্টেরন লেভেল জোরদার করতে সহায়ক।বিশেষ করে আপনার যদি ভিটামিন ডি’র ঘাটতি থাকে, তাহলে অবিলম্বে ঘাটতি পূরণে সচেষ্ট হোন।

৩.ট্রিবুলাস টেরেস্ট্রিস (Tribulus terrestris)
ট্রিবুলাস টেরেস্ট্রিস (Tribulus terrestris) ক্যালট্রপ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত (Zygophyllaceae) একটি একবর্ষজীবি উদ্ভিদ।প্রায় সারা বিশ্বজুড়েই এটি পাওয়া যায়। এটি একটি ঔষধি গাছ যা শত বছর ধরে যৌন শক্তি বৃদ্ধির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমান সময়ে এই ঔষধি উদ্ভিদটি নিয়ে যত রিসার্চ হয়েছে, তার বেশিরভাগই হয়েছে পশুর উপরে। তাতে দেখা গেছে, এটি যৌনকর্ম এবং টেস্টোস্টেরন লেভেলের উন্নতি ঘটায়।

তবে মানুষের উপরও ট্রিবুলাসের প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া গেছে। যে সকল পুরুষদের লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা রয়েছে তাদেরকে ৯০ দিন ট্রিবুলাস সেবন করতে দিয়ে ভাল ফল পাওয়া গেছে। তাদের যৌন স্বাস্থ্যের পাশাপাশি টেস্টোস্টেরন লেভেল ১৬ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। তবে, স্বাস্থ্যবান যুবক ও অ্যাথলেট, যাদের টেস্টোস্টেরন লেভেল ভাল রয়েছে, তাদের জন্য এই সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই। অন্যান্য বুস্টারের মত ট্রিবুলাসও যাদের টেস্টোস্টেরন লেভেলে ঘাটতি এবং যৌন দুর্বলতা রয়েছে শুধুমাত্র তাদের জন্যই প্রযোজ্য।

উপসংহার: ট্রিবুলাস পুরুষদের টেস্টোস্টেরন ঘাটতি এবং যৌন দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি যৌনকর্মে সাফল্য এবং শুক্রানুর মানোন্নয়নে সাহায্য করে।

৪.মেথি
মেথি আরেকটি জনপ্রিয় ঔষধি ভিত্তিক টেস্টোস্টেরন বুস্টার। কিছু সংখ্যক গবেষক মনে করেন, মেথি টেস্টোস্টেরন এনজাইমকে ইস্ট্রোজেনে রূপান্তারক এনজাইমগুলোকে হ্রাস করার মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। মেথি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে।সবচেয়ে ব্যাপক গবেষণাটি হয়েছে ৮ সপ্তাহ’র।প্রতি গ্রুপে ১৫ জন করে ২ দল কলেজ ছাত্র একটি প্রতিরোধ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশগ্রণ করে। তারা সপ্তায় চার বার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। একটি গ্রুপকে প্রতিদিন ৫০০ গ্রাম করে মেথি খেতে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে উভয় গ্রুপের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যেসব ছাত্র মেথি খেয়েছে তাদের শরীর থেকে চর্বি দারুন ভাবে কমেছে এবং শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। যৌনক্রিয়া এবং জীবন মানের উপর মেথে কী প্রভাব বিস্তার করে তাও পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। গবেষকরা ২৫ থেকে ৫২ বছর বয়সী ৬০ জন স্বাস্থ্যবান মানুষকে প্রতিদিন ৬০০ মিলিগ্রাম করে মেথি সাপ্লিমেন্ট/ ক্যাপসুল খেতে দেন। ৬ সপ্তাহ পরে অংশগ্রহণকারীদের প্রদত্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারীদের সাফল্যের যে ফলাফল পাওয়া যায় তা হল: যৌন কামনা বৃদ্ধি: ৮১% বৃদ্ধি, যৌন সাফল্য বৃদ্ধি: ৬৬%, বৃহত্তর শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি: ৮১%।

উপসংহার: প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম মেথি টেস্টোস্টেরন লেভেল এবং যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে ভাল কাজ দেয়। এটি যুবক-বৃদ্ধ, স্বাস্থ্যবান-অস্বাস্থ্যবান উভয়ের জন্যই উপকারী।

৫. ম্যাকারুট
ম্যাকা (maca) একটি উদ্ভিদ, বৈজ্ঞানিকভাবে লিপিডিয়াম মিয়েনি (Lepidium meyenii) নামেও পরিচিত। আবার একে কখনো কখনো পেরুর Ginseng হিসেবে অভিহিত করা হয়। এটি প্রধানত পেরুর কেন্দ্রস্থল এনডেস-এর পার্বত্যাঞ্চলে বেশি জন্মে। এটি ক্রুসিফেরাস (cruciferous ) শ্রেণির সব্জি এবং ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পাতা কপি’র সাথে সম্পর্কিত। তবে এই উদ্ভিদটির প্রধান ভোজ্য অংশ হল এর শিকড়, যা মাটির নীচে উদ্গত হয়। এটি সাদা, কালো ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের হয়। সাধারণ শুষ্ক পাউডার এবং ক্যাপসুল রূপে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে পাওয়া যায়। Maca রুট পাউডার খুবই পুষ্টিকর, এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজের একটি বড় উৎস। এখানে এক আউন্স (২৮ গ্রাম)ম্যাকারুট পাউডারে বিদ্যমান পুষ্টিগুণ উল্লেখ করা হল: ক্যালরি: ৯১, কার্বস : ২০ গ্রাম, প্রোটিন: ৪ গ্রাম, ফাইবার: ২ গ্রাম, ফ্যাট: ১ গ্রাম, ভিটামিন C: RDI ১৩৩%, কপার: RDI ৮৫%, আয়রন: RDI ২৩%, পটাশিয়াম: RDI ১৬%, ভিটামিন বি 6: RDI ১৫%, ম্যাঙ্গানিজ: RDI ১০%।

ম্যাকারুট কার্বস এবং প্রোটিন’র ভাল উৎস, চর্বি কম এবং এতে ন্যায্য পরিমাণে ফাইবার থকে।এছাড়া এতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি, তামা ও লোহার মত কিছু অপরিহার্য ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে।উপরন্তু, এতে গ্লুকোসিনোলেটস (glucosinolates) এবং পলিফেনল (polyphenols ) সহ বিভিন্ন উদ্ভিদ যৌগও রয়েছে।

এটি নারী-পুরুষ উভয়েরই যৌন-আকাঙ্ক্ষা।পুরুষের উর্বরতা এবং শুক্রানুর মান ও পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এছাড়া এটি নারীর নিয়মিত ঋতুস্রাবে সাহায্য করে, যোনির শুস্কতা দূর করে, মেজাজ ভাল রাখে এবং নিদ্রাহীনতা দূর করে। এটি এনার্জি বৃদ্ধি করে এবং খেলোয়ারদের পারফর্মেন্স ভাল করতে সহায়তা করে। ম্যাকা ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।বিশেষ করে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্যের অতিবেগুনী (UV) রশ্মি অরক্ষিত এবং উদ্ভাসিত চামড়াকে পুড়িয়ে এবং ক্ষতি করতে পারে। অতি মাত্রায় অতিবেগুনী (UV) অনেক সময় চামড়ায় বলিরেখা এমনকি স্কিন ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে। এ অবস্থায় ম্যাকা সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির UV ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে।কারণ, এতে রয়েছে প্রতিরক্ষামূলক পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং glucosinolate-এর প্রভাব।

৬. আদা
আদা হচ্ছে গৃহস্থালি রান্না-বান্নার একটি সাধারণ মশলা, যা শত শত বছর ধরে বিকল্প ঔষধ (alternative medicine) হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। এর বহু স্বাস্থ্য-উপকারিতা রয়েছ।বিশেষ করে, প্রদাহ (inflammation) বা জ্বালাপোড়া কমানো এবং টেস্টোস্টেরন জোরদার করার ক্ষেত্রে এটা খুবই কাজ দিতে পারে বলে গবেষণায় জোরালো সমর্থন পাওয়া যায়। ইঁদুরের উপর কয়েকটি পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, টেস্টোস্টেরন লেভেল এবং যৌনকর্মে আদার একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

ডায়াবেটিক ইঁদুরের উপর ৩০ দিনের একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, আদা টেস্টোস্টেরন এবং লিউটেনাইজিং হরমোন বৃদ্ধি করে। আরেকটি গবেষণায় ইঁদুরের টেস্টোস্টেরন প্রায় দ্বিগুণ হতে দেখা যায়। তৃতীয় পরীক্ষায় দেখা যায়, আদা খেয়ে ইঁদুরের টেস্টোস্টেরন দ্বিগুণ হয়। মানুষের উপর পরিচালিত কয়েকটি গবেষণাতেও ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।৭৫ জন অনুর্বর পুরুষদেরকে প্রতিদিন জিনজার সাপ্লিমেন্ট দেয়া হয়। এভাবে তিনমাস পর দেখা যায়, তাদের টেস্টোস্টেরন লেভেল ১৭% এবং লিউটেনাইজিং হরমোন লেভেল প্রায় দ্বিগুণ হয়। এছাড়া স্পার্ম কাউন্ট বৃদ্ধি পায় ১৬%। সব সময়ই আদার গবেষণায় দেখা গেছে, এটি মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই নিরাপদ। টেস্টোস্টেরন লেভেল ছাড়াও আদার অন্যান্য বহুবিধ উপকারীতাও রয়েছে।

উপসংহার: আদা স্বাস্থ্যবান এবং স্বাস্থ্যহীন উভয় শ্রেণির পুরুষের জন্যই উপকারী। এটি টেস্টোস্টেরন লেভেল এবং শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

জিংক বা দস্তা কামোদ্দীপক হিসেবে সুপরিচিত। এটি একটি অপরিহার্য খনিজ।এটি শরীরের মধ্যে শতাধিক রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। বহু বছর ধরে জিংক একটি অতি প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। খাদ্য গ্রহণের রুচী বজায় রাখা, প্রজনন স্বাস্থ্য, ত্বক, হাড়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কাজ ছাড়াও দু’শরও বেশি এনজাইমের কাজে কো-ফ্যাকটর হিসেবে ভূমিকা পালন করে।এটা শোষিত হয় ক্ষুদ্রান্তে। “Journal of Nutrition” অনুযায়ী সাইট্রিক অ্যাসিড zinc-binding ligand হিসেবে কাজ করে জিংক এর শোষণ বাড়িয়ে দেয়। ২০০ এরও বেশি এনজাইমের কাজ করতে জিংক অংশ গ্রহণ করে। এছাড়াও দেহের আরও অনেক বিপাকীয় কাজে জিংক অংশ নেয়। শর্করা ভাঙনে ভূমিকা রয়েছে, এছাড়া দেহ কোষের বৃদ্ধি, জনন এসবেও সহযোগীতা করে। জিংক এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়া। রোগ-জীবাণু প্রতিরোধে জিংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জিংক এর অভাব রয়েছে এমন প্রাণি সহজে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। লালা গ্রন্থির জিংক নির্ভর পলিপেটাইড, গাসটিন এর মাধ্যমেই স্বাদের অনুভূতি পাওয়া যায়। কাজেই যদি জিংক এর অভাব থাকে তবে স্বাদ বোঝার ক্ষমতা কমে যায় অর্থাৎ রুচি কমে যায়। পূর্ণ যৌন পরিপক্কতা এবং বংশবৃদ্ধির সক্ষমতা অর্জনের জন্য জিংক অত্যাবশ্যক। জিংক ডিএনএ ও আরএনএ পলিমারেজ এনজাইমের একটি আবশ্যক উপাদান । কিছু হরমোন যেমন: গ্লুকাগন, ইনসুলিন, গ্রোথ হরমোন এবং সেক্স হরমোন এর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জিংক লেভেলের ঘাটতি টেস্টোস্টেরন লেভেল বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে।আবার জিংক লেভেল বৃদ্ধি টেস্টোস্টেরন লেভেল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। করে।এটি টেস্টোস্টেরন লেভেল ঘাটতি কমাতেও সাহায্য করে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং যাদের জিংকের ঘাটতে রয়েছে, জিংক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ তাদের টেস্টোস্টেরন লেভেল এবং শুক্রানুর পরিমাণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জিংক খুবই উপকারী।

৮. অশ্বগন্ধা
অশ্বগন্ধা আমাদের দেশের ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। গাছের গন্ধ ঘোড়া বা অশ্ব এর মত বলেই সংস্কৃতে একে অশ্বগন্ধা বলে। বাংলায় ও আমার অশ্বগন্ধা-ই বলে থাকি। শক্তিবর্ধক হিসেবে এবং অ্যাফ্রোডেসিয়াক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলেই ইংরেজিতে একে Indian Ginseng বলে। Solanaceae ফ্যামিলির গাছ অশ্বগন্ধার বৈজ্ঞানিক নাম Withania somnifera (L.) Dunal. Withanine নামক রাসায়নিক উপাদান এই গাছ থেকে আলাদা করার কারণে এই গাছের নামে Withania নামকরণ করা হয়েছে। আর somnifera এসেছে somnifer থেকে যার মানে নিদ্রা আনয়নকারী। মূল এবং পাতা স্নায়ুর বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়। এ গাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকায় পাওয়া যায়। নিদ্রা আনয়নকারী ‍ওষুধ হিসেবে প্রচীন মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে এর ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।

অশ্বগন্ধা একটি ছোট গাছ। এটি দুই-আড়াই হাত উঁচু হয়। গাছটি শাখাবহুল। এতে ছোট ছোট মটরের মতো ফল হয়। ওষুধার্থে এর মূল ব্যবহার। ভেষজটির নাম একটি প্রাণির বোধক। আবার তার ক্রিয়াশক্তিরও বোধক। অশ্বের একটি বিশেষ অঙ্গ (লিঙ্গ)। এই ভেষজটির মূলের আকৃতিও অশ্বের লিঙ্গের মতো। আবার এর গাছ-পাতা সিদ্ধ করলে এমন একটা উৎকট গন্ধ বের হয়, যার গন্ধ ঠিক অশ্বমূত্রের গন্ধের মতো। অপরদিকে ক্রিয়াকারিত্বের দিক থেকে অশ্বের যেরকম যৌনক্রিয়ায় অদম্য শক্তি, এই ভেষজটিও মানবদেহে এনে দিয়ে থাকে অশ্বের মতো চলৎশক্তি- কি কর্মশক্তিতে আর কি ইন্দ্রিয়বৃত্তি চরিতার্থের সামর্থ্যে।এখানে তার বীর্যশক্তি অশ্বের মতো, কন্দ অশ্বের মতো এবং গাছ-পাতা সিদ্ধ গন্ধ অশ্বের মূত্রের মতো হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে ‘অশ্বগন্ধ’।

আয়ুর্বেদ মতে, অশ্বগন্ধের অপর নাম বলদা ও বাজিকরি। সুতরাং অশ্বগন্ধা সেবনে যে দেহের যথেষ্ট পুষ্টি হয়, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এটি বাজিকরি অর্থাৎ কামোদ্দীপক ও রতিবর্ধক। ইন্দ্রিয় শৈথিল্যে এটি একটি শ্রেষ্ঠ ওষুধ।
প্রাচীন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সে যুগে বিলাসিনী নারীরা অশ্বগন্ধার মূল বেটে দেহে লেপন করতো, তাতে দেহকান্তির উৎকর্ষ বাড়ত, কামভাব জাগ্রত হতো এবং রতিশক্তি বর্ধিত হতো।

অশ্বগন্ধার অন্য কয়েকটি ব্যবহারের কথাও জানা যায়। চক্রদত্ত বলেন, অশ্বগন্ধা গর্ভপ্রদ। ঋতুস্নানের পর বন্ধ্যা রমণী গোদুগ্ধের সঙ্গে সেবন করবে। শোথ রোগে গোদুগ্ধসহ অশ্বগন্ধা বেটে পান করলে উপকার হয়। সুনিদ্রার জন্য অশ্বগন্ধাচূর্ণ চিনিসহ সেব্য। মূল বেটে প্রলেপ দিলে বাত-বেদনা ভালো হয়। একটু গরম করে গ্রন্থিস্ফীতিতে উপকার হয়। ওষুধটি বল, বীর্য, পুষ্টিকারক এবং আগ্নেয় গুণসম্পন্ন। ডা. ডি এন চট্টোপাধ্যায় ওষুধটি বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার করে ইন্দ্রিয় দৌর্বল্যে যথেষ্ট ফল পেয়েছেন।
অনেকে অনেক রোগে ভেলকিবাজি দেখিয়ে থাকেন। এটিও ক্রনিক ব্রংকাইটিসে ভেলকিবাজি দেখানোর মতো একটি ওষুধ। রোগী ক্রমাগত কাশতেই থাকে; কিন্তু কফ বা সর্দি ওঠার কোনো নাম-গন্ধও নেই। অশ্বগন্ধার মূল অন্তর্ধুমে পুড়িয়ে (ছোট মাটির হাঁড়িতে মূলগুলো ভরে সরা দিয়ে ঢেকে পুনঃমাটি লেপে শুকিয়ে ঘুটের আগুনে পুড়ে নিতে হয়। আগুন নিভে গেলে হাঁড়ি থেকে মূলগুলো বের করে গুঁড়ো করে নিতে হয়) ভালো করে গুঁড়িয়ে নিয়ে আধা গ্রাম মাত্রায় একটু মধুসহ চেটে খেতে হয়।

ওষুধটি বল, বীর্য, পুষ্টিকারক এবং আগ্নেয় গুণসম্পন্ন। ডা. ডি এন চট্টোপাধ্যায় ওষুধটি বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার করে ইন্দ্রিয় দৌর্বল্যে যথেষ্ট ফল পেয়েছেন। বার্ধক্যজনিত সমস্যা নিরাময়ে এমনকি যৌবন ধরে রাখতেও অশ্বগন্ধার অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চেহারা ফেরাতেও অশ্বগন্ধার বিকল্প নেই।